হিন্দু ধর্মে একাদশীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বছরে মোট ২৪টি একাদশী তারিখ আসে, যার প্রতিটির নিজস্ব পৌরাণিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। উৎপন্না একাদশী, মাঘশীর্ষ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের একাদশ দিনে উদযাপিত হয়। এটিকে সমস্ত একাদশীগুলির শুরু পয়েন্ট হিসাবে মনে করা হয়, কারণ এই দিনেই একাদশীর জন্ম হয়েছিল। উৎপন্না একাদশী কেবল ধর্ম এবং ভক্তির উৎসব নয়, এটি আত্মসংযম, তপস্যা এবং শ্রদ্ধার প্রতীকও।
২০২৫ সালে উৎপন্না একাদশী তারিখ শুরু হবে ১৫ নভেম্বর রাত ১২টা ৪৯ মিনিটে। এর সমাপ্তি পরবর্তী দিন ১৬ নভেম্বর রাত ২টা ৩৭ মিনিটে হবে। হিন্দু ধর্মে উদয়াতিথির বিশ্বাস রয়েছে। উৎপন্না একাদশী তারিখের উদয় ১৫ নভেম্বর, তাই উদয়াতিথি অনুযায়ী উৎপন্না একাদশী ১৫ নভেম্বর উদযাপিত হবে।
এভাবে বলা হয় যে উৎপন্না একাদশী দিনে উপবাস রাখা, দীন–দুঃখী, দরিদ্রদের দান করা এবং ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে মানুষের সমস্ত পাপ নষ্ট হয়ে যায় এবং তাকে মোক্ষ লাভ হয়। এই উপবাস জীবনকে ইতিবাচকতা, নিয়ম এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়। যারা জীবনে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন, তারা এই একাদশী উপবাস রাখেন এবং ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ করেন।
সনাতন ধর্মের শাস্ত্রগুলিতে এই একাদশীর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। বলা হয় যে এই দিন উপবাস ও দান করলে সাধক বৈকুণ্ঠ ধামের অধিকারী হন। এর সাথে জন্মজন্মান্তরে করা পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ভগবান বিষ্ণুর কৃপা ভক্তদের উপর বর্ষিত হয়।
উৎপন্না একাদশী দিনে আমরা আমাদের বাড়িতে পূজা–আর্চনা করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয়দের সাহায্য করব। এই দিনে দীন–দুঃখী, দরিদ্রদের খাবার দেওয়া, বস্ত্র দান করা এবং সেবা করা অত্যন্ত পুণ্য কাজ মনে করা হয়। এছাড়াও, আপনার পরিবার নিয়ে এই দিনটিকে একটি পবিত্র উৎসব হিসেবে উদযাপন করুন।
সনাতন ধর্মে দানকে পরম কর্তব্য বলা হয়েছে, যা কেবল ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয়, সমাজের কল্যাণের পথও প্রশস্ত করে। ধর্মগ্রন্থগুলির মতে, দান মানুষকে স্বার্থপরতার বাইরে নিয়ে যায় এবং তাকে করুণা এবং ভালোবাসার পথ দেখায়। দান কেবল বস্তু বিনিময়ের বিষয় নয়, এটি আত্মার পবিত্রতার চর্চা। এটি পুণ্য অর্জনের একটি মাধ্যম, যা মানুষকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করে। দান কেবল বর্তমান জীবনে সুখ–শান্তি দেয় না, বরং এটি ভবিষ্যতের জন্যও সুকৃত্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই, দানের মাধ্যমে মানুষ কেবল তার পাপগুলো শুদ্ধ করে না, বরং সমাজে ইতিবাচক শক্তি এবং সঙ্গতি বিস্তার করে। তাই সনাতন ধর্মে বিভিন্ন গ্রন্থে দানের গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। গোস্বামী তুলসীদাসজি দানের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেছেন –
তুলসী পঙ্খী কে পিয়ে ঘটে না সরিতা নীর।
দান দেয়ে ধন না ঘটেই যো সহায় রঘুবীর।।
অর্থাৎ, পাখিরা পানি পানের পর যেভাবে নদীর জল কমে না, ঠিক তেমনি যদি আপনার উপর ভগবান বিষ্ণুর কৃপা থাকে, তবে দান করলে আপনার বাড়িতে কখনও ধনের অভাব হবে না।
উৎপন্না একাদশী দিনে অন্নের দান সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। এই দিন দান করে নারায়ণ সেবা সংস্থায় দীন–দুঃখী, দরিদ্রদের খাবার দেওয়ার প্রকল্পে সহায়তা করে পুণ্যের ভাগী হোন।
প্রশ্ন: উৎপন্না একাদশী ২০২৫ কখন হবে?
উত্তর: ২০২৫ সালে উৎপন্না একাদশী ১৫ নভেম্বর উদযাপিত হবে।
প্রশ্ন: উৎপন্না একাদশী কোন দেবতার জন্য নিবেদিত?
উত্তর: উৎপন্না একাদশী ভগবান বিষ্ণুর জন্য নিবেদিত।
প্রশ্ন: উৎপন্না একাদশী দিনে কোন জিনিস দান করা উচিত?
উত্তর: উৎপন্না একাদশী দিনে প্রয়োজনীয়দের অন্ন, বস্ত্র এবং খাবার দান করা উচিত।