জীবনের নানান মোড় একজন মানুষকে দুঃখে ভাসিয়ে দিতে পারে এবং তার জগৎকে আনন্দের এক অফুরন্ত স্রোতে ভরিয়ে দিতে পারে। মহারাষ্ট্রের শিরপুরের বাসিন্দা গোপাল এবং জাগ্রতির ক্ষেত্রেও একই রকম অভিজ্ঞতা ঘটে। তারা বর্ণনা করেন যে তাদের বড় মেয়ে, ১১ বছর বয়সী উমা পানওয়ার, শারীরিক বিকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। তার জন্ম সুখ নিয়ে আসলেও, এর সাথে ছিল দ্বিগুণ দুঃখ। উমার হাঁটুর নীচে ডান পায়ের জন্মগত ত্রুটি হাড় ছাড়া বাঁকা ছিল। এতে তার বাবা-মা এবং আত্মীয়স্বজনরা অবাক হয়ে যান। কিন্তু ভাগ্যের সামনে তারা আর কী করতে পারতেন? তারা তাদের দুর্ভাগ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং তাদের মেয়েকে লালন-পালনের জন্য তাদের প্রচেষ্টা উৎসর্গ করেছিলেন। উমার ক্রমবর্ধমান বয়স তার এবং তার পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার প্রতিদিনের চলাচলের জন্য কারও কাছ থেকে ক্রমাগত সহায়তা প্রয়োজন ছিল, যার ফলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করা তার জন্য একটি কষ্টকর কাজ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদের সাক্ষী হয়ে, উমা প্রায়শই ব্যথায় অশ্রু ঝরাতেন।
কাছের একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর, তারা নারায়ণ সেবা সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত বিনামূল্যে পরিষেবা সম্পর্কে জানতে পারেন। এই আবিষ্কার গোপাল এবং জাগ্রতীর মধ্যে আশা জাগিয়ে তোলে। অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী গোপাল আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন, যার ফলে তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি উদয়পুরে তাদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন। তাদের আগমনের পর, বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা উমার পরীক্ষা করেন এবং ২৭শে ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে, একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। চিকিৎসা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে এবং প্রায় দুই বছর পরে, ২৫শে আগস্ট ২০২৩ তারিখে, একটি ক্যাম্পের সময় তার পা পরিমাপ করা হয়। পরবর্তীকালে, ২০শে অক্টোবর শিরপুরে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ শিবিরে, উমা তার কৃত্রিম অঙ্গ গ্রহণ করেন, যা তার মুখকে এক নতুন উজ্জ্বলতায় আলোকিত করে। তার পরিবার জানায় যে উমাকে তার কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে ঘরে ঘুরে বেড়াতে এবং দৌড়াতে দেখা এক অবর্ণনীয় আনন্দ যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
প্রতিষ্ঠানটি উমাকে যে আনন্দ দিয়েছে তার জন্য তারা তাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞ। আবার, ২০শে অক্টোবর শিরপুরে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ শিবিরে, উমা তার বিনামূল্যে কৃত্রিম পা গ্রহণ করেন। নতুন অঙ্গ নিয়ে যখন উমা ঘরের চারপাশে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন, তখন তার মুখের উজ্জ্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠল। আত্মীয়স্বজনরা জানিয়েছেন যে প্রতিষ্ঠানটি উমাকে যে আনন্দ দিয়েছে তা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। তাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা।