01 December 2025

সফলা একাদশী: জানুন তারিখ, শুভ মুহূর্ত এবং দানের মাহাত্ম্য

Start Chat

হিন্দু ধর্মে একাদশীর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। একে সকল ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। একাদশীর ব্রত থেকে মানুষ কেবল পার্থিব সুখসুবিধাই পায় না, বরং মোক্ষের পথও সুগম হয়। এই একাদশীগুলির মধ্যে একটি হলো সফলা একাদশী, যা পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে পালন করা হয়। যেমন নাম থেকেই বোঝা যায়, এই দিনে ব্রত পূজার মাধ্যমে জীবনে সাফল্য লাভ হয়। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, সফলা একাদশীর ব্রতে ভগবান বিষ্ণু প্রসন্ন হন এবং ভক্তকে সুখ, শান্তি সমৃদ্ধির আশীর্বাদ প্রদান করেন।

 

সফলা একাদশী ২০২৫ কখন?

 

পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটে শুরু হবে। যা শেষ হবে ১৫ ডিসেম্বর রাত ৯টা ১৯ মিনিটে। হিন্দু ধর্মে উদয়তিথি বিবেচনা করে উৎসব উদযাপন করা হয়, তাই ২০২৫ সালে সফলা একাদশী ১৫ ডিসেম্বর পালিত হবে।

 

সফলা একাদশীর মাহাত্ম্য

 

সফলা একাদশী অর্থসাফল্য প্রদানকারী একাদশী এই দিনটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের প্রতীক। পৌরাণিক গ্রন্থে বর্ণনা রয়েছে যে, এই ব্রত করলে ব্যক্তি তার পাপ থেকে মুক্ত হয় এবং জীবনের সকল কাজ সফল হয়।

 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন

 

একাদশ্যাং তু যো ভক্তাঃ কুর্বন্তি নিয়তঃ শুচিঃ।

তে যান্তি পরমং স্থানং বিষ্ণোঃ পরমপূজিতম্।।

 

অর্থাৎ, যে ভক্ত একাদশীর ব্রত সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা নিয়মে করে, সে ভগবান বিষ্ণুর পরম ধাম লাভ করে।

 

পূজা উপাসনার মাহাত্ম্য

 

সফলা একাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর পূজার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এই দিনের পূজা পদ্ধতি সহজ কার্যকর:

 

ব্রত উপবাস: সফলা একাদশীতে ব্রত পালন পাপের নাশ করে এবং পুণ্য প্রদান করে। ব্রত দুটি প্রকারে রাখা যায়নির্জল বা ফলাহার।

ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা: এই দিনে ভগবান বিষ্ণুকে হলুদ ফুল, তুলসী ফল অর্পণ করা উচিত।

মন্ত্র জপ ভজনসংকীর্তনবিষ্ণু সহস্রনাম, ভাগবত গীতা পাঠ এবংওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়মন্ত্র জপ জীবনে ইতিবাচক শক্তি নিয়ে আসে।

দীপদান: সফলা একাদশীর রাতে দীপদান অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো বিস্তার করে।

 

দানের মাহাত্ম্য

 

সফলা একাদশী কেবল ব্রত পূজা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, এই দিনে দানেরও বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।

 

অন্নদান: ক্ষুধার্তকে খাদ্য করালে ভগবান বিষ্ণু প্রসন্ন হন। অসহায় দরিদ্রদের সাহায্য করলে পুণ্য লাভ হয়।

 

পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে:

দানং প্রীতিকরং লোকে, দানং স্বর্গস্য সাধনম্।

 

অর্থাৎ, দান কেবল এই লোকেই আনন্দ দেয় না, বরং স্বর্গের পথও সুগম করে।

 

বস্ত্রদান: দরিদ্র প্রয়োজনীয়দের বস্ত্রদান করলে জীবনে সুখশান্তি আসে।

 

দীনদুঃখী অসহায় মানুষদের সাহায্য কেন করা উচিত?

 

সফলা একাদশীর ব্রত আমাদের অন্যদের সাহায্য করার বার্তা দেয়। দীনদুঃখী অসহায়দের সাহায্য করা মানব ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ।

 

পরোপকারের পুণ্য: দীনদুঃখীদের সাহায্য করলে আত্মা তৃপ্ত হয় এবং ভগবানের কৃপা লাভ হয়।

সমাজে ভারসাম্যদানের মাধ্যমে সমাজে সমতা সামঞ্জস্য আসে।

পুণ্যের সঞ্চয়: এই দিনে প্রদত্ত দান বহু জন্ম পর্যন্ত পুণ্য প্রদান করে।

 

সফলা একাদশীতে কী কী দান করা উচিত

 

সফলা একাদশীতে অন্নদানের সর্বাধিক মাহাত্ম্য রয়েছে। এই দিনে দান করে নারায়ণ সেবা সংস্থায় দীনদুঃখী, দরিদ্র মানুষদের খাদ্য প্রদানে সহায়তা করে পুণ্যের অংশী হোন।

 

সফলা একাদশীর ব্রত পূজা জীবনকে সফল, পবিত্র সমৃদ্ধ করে তোলে। এই দিনটি আত্মপর্যালোচনা, ভগবানের ভক্তি অন্যদের সাহায্যের বার্তা দেয়। এই পবিত্র দিনে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করুন, ব্রত পালন করুন এবং প্রয়োজনীয়দের সাহায্য করুন। এই উৎসব কেবল পার্থিব সাফল্য নয়, আধ্যাত্মিক উন্নতির পথও উন্মুক্ত করে।

 

যথা দীপো ঘৃতৈর্ধৃতঃ।

তথা দানং পবিত্রং সফলং ভবেত্।

 

অর্থাৎ, যেমন প্রদীপ আলো ছড়ায়, তেমনি দান জীবনে পবিত্রতা সাফল্য নিয়ে আসে।

 

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

 

প্রশ্ন: সফলা একাদশী ২০২৫ কখন?

উত্তর: ২০২৫ সালে সফলা একাদশী ১৪ ডিসেম্বর পালিত হবে।

 

প্রশ্ন: সফলা একাদশী কোন দেবতার জন্য উৎসর্গীকৃত?

উত্তর: সফলা একাদশী ভগবান বিষ্ণুর জন্য উৎসর্গীকৃত।

 

প্রশ্ন: সফলা একাদশীতে কী কী দান করা উচিত?

উত্তর: সফলা একাদশীতে প্রয়োজনীয়দের অন্ন, বস্ত্র খাদ্যের দান করা উচিত।

 

X
Amount = INR