ভারতীয় সংস্কৃতিতে আমাবস্যার দিন অত্যন্ত পবিত্র এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ধারণ করে। এই দিনটি আমাদের আত্মবিশ্লেষণ, শান্তি এবং ঈশ্বরের আরাধনার সুযোগ দেয়। সারা বছরের আমাবস্যাগুলির মধ্যে পৌষ আমাবস্যার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এই দিনটি চাঁদের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও নতুন শুরু এবং আত্মশুদ্ধির প্রতীক। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে করা পূজা, ব্রত এবং দান ব্যক্তির জীবনকে সুখ–শান্তি এবং সমৃদ্ধিতে পূর্ণ করে দেয়। সনাতন traditionে পৌষ আমাবস্যাকে নিজের জীবনকে নতুন দিশা দেওয়া এবং সমাজের প্রতি নিজের কর্তব্য পালন করার শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
পৌষ আমাবস্যা ২০২৫ কখন?
পৌষ আমাবস্যার শুভ মুহূর্ত ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ সকাল ৪টা ৫৯ মিনিটে শুরু হবে। এর সমাপ্তি পরবর্তী দিন ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ সকালে ৭টা ১২ মিনিটে হবে। উদয়াতিথি অনুযায়ী পৌষ আমাবস্যা ১৯ ডিসেম্বর পালিত হবে।
পৌষ আমাবস্যার গুরুত্ব
পৌষ আমাবস্যাকে “মোক্ষদায়িনী আমাবস্যা” বলা হয়। এই দিনটি পিতৃগণের আত্মার শান্তির জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে পবিত্র নদী এবং তীর্থস্থানে স্নান করলে ব্যক্তি তার পাপ থেকে মুক্তি পায়।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা–তে বলা হয়েছে:
“ন হি জ্ঞানে সাদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে।“
অর্থাৎ, পবিত্রতার অন্য কোনো পথ জ্ঞান এবং আত্মশুদ্ধি থেকে বড় নয়। পৌষ আমাবস্যা আমাদের এই শুদ্ধতা এবং অন্তর্দৃষ্টি শান্তির দিকে নিয়ে যায়।
পূজা এবং উপাসনার গুরুত্ব
পৌষ আমাবস্যায় পূজা এবং উপাসনার অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনে ব্যক্তিকে মন এবং শরীর দিয়ে পবিত্র হয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করা উচিত।
দানের গুরুত্ব
দান ভারতীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটিকে ধর্ম এবং মানবতার শীর্ষ কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। পৌষ আমাবস্যায় দান করলে বিশেষ পুণ্য লাভ হয়।
ভুখা মানুষকে খাবার দেওয়া সবচেয়ে বড় পুণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দরিদ্রদের খাওয়ানোর পাশাপাশি গরিবদের উষ্ণ কাপড় এবং কম্বল দেওয়া আত্মিক সন্তুষ্টি প্রদান করে।
শাস্ত্রের মধ্যে বলা হয়েছে:
“দানং হি পরমং ধর্মং।“
অর্থাৎ, দানই সবচেয়ে বড় ধর্ম।
দীন–দুঃখী এবং অসহায়দের সাহায্য কেন করবেন?
পৌষ আমাবস্যা উৎসব আমাদের করুণা এবং দয়ার বার্তা দেয়। এই দিনটি আমাদের সমাজের সেই সমস্ত শ্রেণীর মানুষের সাহায্য করার সুযোগ দেয় যারা দীন–দুঃখী এবং অসহায়।
পরোপকারের গুরুত্ব: “সেবা পরম ধর্মঃ।” অর্থাৎ, সেবা সবচেয়ে বড় ধর্ম।
সকারাত্মক শক্তি: দরিদ্রদের সাহায্য করলে আমাদের জীবনে সকারাত্মকতা এবং শান্তি আসে।
পৌষ আমাবস্যায় এই জিনিসগুলো দান করুন
পৌষ আমাবস্যায় ধানের দান সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। এই দিনে দান করে নারায়ণ সেবা সংস্থানে দীন–দুঃখী, দরিদ্র মানুষদের খাবার দেওয়ার প্রকল্পে সহায়তা করে পুণ্যের ভাগী হন।
পৌষ আমাবস্যা শুধু একটি উৎসব নয়, বরং আমাদের জীবনকে আধ্যাত্মিকতা এবং সকারাত্মকতা দিয়ে পূর্ণ করার সুযোগ। এই দিনটি আমাদের আত্মশুদ্ধি, ঈশ্বরের আরাধনা এবং অন্যদের সাহায্যের বার্তা দেয়। এই পবিত্র সুযোগে আমরা আমাদের মন, ভাষা এবং কর্মকে পবিত্র করি, পিতৃগণের আশীর্বাদ লাভ করি এবং দরিদ্রদের সাহায্য করি।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
প্রশ্ন: পৌষ আমাবস্যা ২০২৫ কখন?
উত্তর: ২০২৫ সালে পৌষ আমাবস্যা ১৯ ডিসেম্বর পালিত হবে।
প্রশ্ন: পৌষ আমাবস্যা কোন দেবতার জন্য উৎসর্গিত?
উত্তর: পৌষ আমাবস্যা ভগবান বিষ্ণুর জন্য উৎসর্গিত।
প্রশ্ন: পৌষ আমাবস্যায় কোন জিনিস দান করা উচিত?
উত্তর: পৌষ আমাবস্যায় দরিদ্রদের ধান, বস্ত্র এবং খাবার দান করা উচিত।