23 September 2025

নবরাত্রির নয় দিন ধরে দেবী মাতার এই রূপগুলির পূজা করুন

Start Chat

হিন্দু ধর্মে নবরাত্রির উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এটি ভক্তি, বিশ্বাস এবং আত্মার শুদ্ধির জন্য একটি ঐশ্বরিক উপলক্ষ। নবরাত্রির সময় দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজা করে ভক্তরা তাদের জীবন থেকে অশান্তি এবং নেতিবাচকতা দূর করতে পারেন এবং ইতিবাচক শক্তি এবং উৎসাহ সঞ্চার করতে পারেন। এই উৎসব কেবল ভক্তি এবং উপাসনা সম্পর্কে নয়, বরং আত্মশক্তি এবং আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করারও একটি সুযোগ।

নবরাত্রির প্রতিটি দিন দেবীর একটি নির্দিষ্ট রূপের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই নয়টি রূপের ধ্যান এবং পূজা সৌভাগ্য, স্বাস্থ্য, সম্পদ এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক নবরাত্রির প্রতিটি দিনে দেবীর কোন কোন রূপের পূজা করা উচিত এবং তাদের তাৎপর্য।

 

প্রথম দিন: মা শৈলপুত্রী

নবরাত্রির প্রথম দিন মা শৈলপুত্রীকে উৎসর্গ করা হয়। শৈলপুত্রী মানে পাহাড়ের কন্যা। মা অম্বার এই রূপ শক্তি এবং সাহসের প্রতীক। শৈলপুত্রী হলেন মা পার্বতীর একটি রূপ, যিনি তার ভক্তদের উপর করুণা এবং আশীর্বাদ বর্ষণ করেন। এই দিনে উপবাস ও তাঁর পূজা করলে মানসিক ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

 

দ্বিতীয় দিন: মা ব্রহ্মচারিণী

দ্বিতীয় দিন, মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা করা হয়। এই রূপটি ধ্যান ও জ্ঞানের প্রতীক। মা ব্রহ্মচারিণীর প্রতি ভক্তি মানসিক শান্তি, জ্ঞান বৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতি নিয়ে আসে। তাঁর পূজা আত্মায় ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।

 

তৃতীয় দিন: মা চন্দ্রঘণ্টা

তৃতীয় দিন, মা চন্দ্রঘণ্টার পূজা করা হয়। এই রূপটি নির্ভীকতার প্রতীক। বিশ্বাস করা হয় যে মা চন্দ্রঘণ্টা শত্রুদের জয় করেন এবং ভয় দূর করেন। এই দিনে তাঁর ধ্যান ও পূজা করলে জীবনে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হয়।

 

চতুর্থ দিন: মা কুষ্মাণ্ডা

নবরাত্রির চতুর্থ দিন, মা কুষ্মাণ্ডার পূজা করা হয়। দেবীর এই রূপ সৃষ্টির শক্তির প্রতীক। মা কুষ্মাণ্ডার আশীর্বাদে জীবনে ইতিবাচক শক্তি প্রবাহিত হয়। তাঁর ধ্যান করলে আত্মায় উৎসাহ এবং জীবনে নতুন শক্তি আসে।

 

পঞ্চম দিন: স্কন্দমাতা

পঞ্চম দিনে, দেবী স্কন্দমাতার পূজা করা হয়। এই রূপটি করুণা এবং মাতৃভক্তির প্রতীক। স্কন্দমাতা তাঁর ভক্তদের জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি প্রদান করেন এবং সন্তানদের রক্ষা করেন। তাঁর উপাসনা দেবীর আশীর্বাদ প্রদান করে এবং পরিবারে সম্প্রীতি ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।

 

ষষ্ঠ দিন: মা কাত্যায়নী

নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে মা কাত্যায়নীর পূজা করা হয়। এই রূপটি সাহস এবং সংগ্রামের শক্তির প্রতীক। মা কাত্যায়নী নেতিবাচক শক্তি ধ্বংস করে এবং তাঁর ভক্তদের সুরক্ষা প্রদান করে। তাঁর উপাসনা জীবনে সাহস, ধৈর্য এবং আত্মনির্ভরশীলতা বিকাশ করে।

 

সপ্তম দিন: মা কালরাত্রি

সপ্তম দিনে মা কালরাত্রির পূজা করা হয়। দেবীর এই রূপ ভয় এবং অজ্ঞতা দূর করে। মা কালরাত্রি তাঁর ভক্তদের সকল ঝামেলা এবং নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করেন। তাঁর উপাসনা ভয় এবং হতাশা ধ্বংস করে এবং জীবনে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

 

অষ্টম দিন: মা মহাগৌরী

অষ্টম দিনে মা মহাগৌরীকে পূজা করা হয়। এই রূপটি সৌন্দর্য এবং করুণার প্রতীক। মহাগৌরী তাঁর ভক্তদের জীবন থেকে দুঃখ এবং রোগ দূর করে। তাঁর উপাসনা মানসিক শান্তি এবং শারীরিক শক্তি নিয়ে আসে।

নবম দিন: মা সিদ্ধিদাত্রী

নবরাত্রির শেষ দিন মা সিদ্ধিদাত্রীকে উৎসর্গ করা হয়। এই রূপ সকল সিদ্ধি এবং আশীর্বাদ প্রদান করে। মা সিদ্ধিদাত্রীর উপাসনা জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতি নিয়ে আসে। এই দিনটিকে মায়ের পূর্ণ আশীর্বাদের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নবরাত্রির এই নয়টি ঐশ্বরিক রূপের উপাসনা কেবল ভক্তি ও শ্রদ্ধার অনুভূতিই আনে না, বরং জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন, আধ্যাত্মিক অগ্রগতি এবং মানসিক শান্তিও বয়ে আনে। প্রতিদিন মাতৃদেবীর একটি নির্দিষ্ট রূপের ধ্যান করলে জীবনের দুঃখ এবং নেতিবাচকতা নষ্ট হয় এবং আশীর্বাদ আসে।

এই পবিত্র নবরাত্রিতে, মাতৃদেবীর এই নয়টি রূপের উপাসনা করুন এবং আপনার জীবনকে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধিতে আলোকিত করুন। মাতৃদেবীর আশীর্বাদে আপনার জীবন সর্বদা শুভ এবং ঐশ্বরিক অভিজ্ঞতায় পূর্ণ হোক।

X
Amount = INR