১৫ই আগস্ট কেবল ভারতের ইতিহাসের একটি তারিখ নয়, বরং এটি সেই দিন যখন দেশ বছরের পর বছর দাসত্বের পর স্বাধীনতার নিঃশ্বাস ফেলেছিল। প্রতি বছর দেশজুড়ে এই দিনটি একটি জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। স্কুল, সরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান এবং স্কোয়ার এবং মোড়ে তেরঙ্গা উত্তোলন করা হয় এবং দেশাত্মবোধক গান শোনা যায়।
কিন্তু স্বাধীনতা দিবস কেবল উদযাপনের উপলক্ষ নয়, এটি আত্মসমালোচনারও সময়। এটি ভাবার একটি সুযোগ যে আমরা কি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কল্পনা করা স্বাধীন ভারত গড়ে তুলতে পেরেছি?
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়েছিল এবং সেই দিনে দিল্লিতে প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়েছিল। এবার ভারতের স্বাধীনতা লাভের ৭৮ বছর হয়ে গেছে, তাই ২০২৫ সালে ভারত ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন কেবল একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম ছিল না, এটি ছিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মানবিক চেতনার একটি আন্দোলনও। ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ, মঙ্গল পান্ডে, তাতিয়া টোপে, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, সর্দার প্যাটেল, পণ্ডিত নেহেরু-এর মতো অগণিত নাম এই আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এই ত্যাগের ফলে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হলে, মানুষের চোখে একটি নতুন ভারতের স্বপ্ন ছিল। এমন একটি দেশ যা স্বনির্ভর, সমতার উপর ভিত্তি করে এবং যেখানে প্রতিটি নাগরিক সম্মান এবং সুযোগ পায়।
স্বাধীনতার পর ভারত অনেক অর্জন করেছে। বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তি, কৃষি, খেলাধুলা এবং মহাকাশের মতো ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বব্যাপী পরিচিতি তৈরি করেছে। গণতন্ত্রের শক্তিশালী শিকড় দেশকে স্থিতিশীলতা দিয়েছে।
কিন্তু আজও স্বাধীন ভারতের সামনে অনেক প্রশ্ন দাঁড়িয়ে আছে; দারিদ্র্য, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, লিঙ্গ বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা এবং দুর্নীতির মতো সমস্যাগুলি এখনও আমাদের স্বাধীনতার তাৎপর্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
স্বাধীনতা কেবল অধিকার অর্জনের কথা নয়, এটি কর্তব্য পালনের কথাও বলে। সংবিধান আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার অধিকার এবং সমান সুযোগ দেয়, তবে এর সাথে সাথে এটি আমাদের দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়ারও প্রত্যাশা করে। আজ আমাদের নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্যগুলি বোঝা এবং দেশের স্বার্থে কাজ করার প্রয়োজন।
দেশের ভবিষ্যৎ তরুণদের হাতে। তরুণরা যদি তাদের শক্তি এবং দক্ষতা সঠিক পথে ব্যবহার করে, তাহলে দেশ উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। তবে এর জন্য শিক্ষা এবং সংস্কৃতির সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন। তরুণদের কেবল অধিকার নয়, জাতি গঠনের দায়িত্বও বুঝতে হবে।
স্বাধীনতা দিবস কেবল আমাদের গর্ব এবং গৌরব বোধ করে না, বরং এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা রক্ষা করা কেবল সীমান্তে মোতায়েন সৈন্যদের দায়িত্ব নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকেরও।
এই স্বাধীনতা দিবসে, আসুন আমরা শপথ নিই যে আমরা কেবল দেশকে ভালোবাসব না, বরং এর উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখব। এটি হবে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।
জয় হিন্দ।