শীতকাল যত এগিয়ে আসে, বাতাসে এক স্বতন্ত্র ঠান্ডা ভাব আসে। সকালের কুয়াশা, লেপের উষ্ণতা এবং চায়ের বাষ্পের সাথে আমাদের দৈনন্দিন রুটিন বদলে যায়। ঘরের হিটার জ্বলে ওঠে, শিশুরা সোয়েটার এবং মোজা পরে স্কুলে যায়, আর শহরের রাস্তায় বাদাম এবং ভুট্টার সুবাস ভরে ওঠে। এই ঋতু তার সাথে অনেক সৌন্দর্য নিয়ে আসে—কিন্তু এর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে এমন একটি সত্য যা হৃদয়কে ঠান্ডা করে।
কারণ এই শীতের ঠান্ডা কারো জন্য সান্ত্বনা, কারো জন্য শাস্তি।
রাতের তাপমাত্রা যখন নেমে আসে, তখন প্রত্যন্ত গ্রাম বা শহরের এক কোণে একজন মা তার সন্তানকে তার পুরনো শাল দিয়ে জড়িয়ে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করেন। একজন বৃদ্ধ লোক একটি মৃদু আগুনের কাছে বসে তার বলিরেখায় জমে থাকা ঠান্ডা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করেন, আর একজন শ্রমিক তার ছেঁড়া চাদরে সারা রাত ঘুরপাক খায়। তাদের জন্য, ঠান্ডা বাতাস কেবল আবহাওয়ার পরিস্থিতি নয়, বরং একটি চ্যালেঞ্জ—বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ।
অনেক সময়, আমরা ফুটপাতে, বাস স্টপে, অথবা বস্তিতে কাঁপতে কাঁপতে মুখ দেখেছি। তাদের কাছে পশমী কাপড় নেই, লেপ নেই, উষ্ণ বিছানা নেই। এমন পরিস্থিতিতে শীত তাদের জন্য আরাম নয়, যন্ত্রণা নিয়ে আসে।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে, নারায়ণ সেবা সংস্থান এই শীতল রাতগুলিতে উষ্ণতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে আসছে। এবার, “সুকুন ভারি সার্দি” পরিষেবা প্রকল্পের আওতায়, সংস্থাটি অভাবীদের মধ্যে ৫০,০০০ সোয়েটার এবং ৫০,০০০ কম্বল বিতরণের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। এটি কেবল পোশাক বিতরণ নয়, বরং মানবতার আহ্বানের প্রতি সাড়া। এটি সেইসব অসহায়, গৃহহীন এবং দরিদ্র পরিবারের জন্য স্বস্তির বার্তা যারা কোনওভাবে প্রতি শীতের রাতে বেঁচে থাকে।
সংগঠনের দলগুলি গ্রাম, শহর এমনকি বস্তিতেও এই পরিষেবা প্রদান করছে। প্রতিবার যখনই কারো কাঁপতে নিষ্পাপ শিশুকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করা
ঠান্ডা আবহাওয়া প্রায়শই শিশুদের জন্য নিষ্ঠুর হয়। অনেক নিষ্পাপ শিশুকে সোয়েটার, টুপি বা জুতা ছাড়াই স্কুলে যেতে বাধ্য করা হয়। এমনও দেখা যায় যে ঠান্ডার কারণে তারা প্রায়শই স্কুল মিস করে। নারায়ণ সেবা সংস্থান এই ছোট বাচ্চাদের জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ চালু করেছে – সোয়েটার, পশমী টুপি এবং জুতা এবং মোজা বিতরণ অভিযান।
এটি কেবল শিশুদের ঠান্ডা থেকে মুক্তি দেয় না, বরং তাদের পড়াশোনা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যেতেও নিশ্চিত করে। একটি উষ্ণ সোয়েটার এই ছোট হৃদয়ের জন্য কেবল পোশাকের চেয়েও বেশি কিছু প্রদান করে, বরং শিক্ষার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার আশাও প্রদান করে।
যখন একজন দাতা অভাবী কাউকে একটি কম্বল বা সোয়েটার দেন, তখন তারা কেবল পোশাকই নয় বরং সম্মানও প্রদান করেন। এই পরিষেবা তাদের জানাতে সাহায্য করে যে তারা এই পৃথিবীতে একা নন; কেউ একজন চিন্তা করে। প্রতি বছর, হাজার হাজার মানুষ এই সেবা প্রকল্পে যোগ দেয়; এই ছোট প্রচেষ্টাগুলি ঠান্ডা রাতে উষ্ণতার এক বিশাল শিখা প্রজ্বলিত করে, দরিদ্র ও অভাবীদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।
প্রতি বছরের মতো, এবারও, নারায়ণ সেবা সংস্থান আপনাকে এই সেবা যাত্রার অংশ হতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আপনার ছোট্ট অবদান – একটি সোয়েটার বা একটি কম্বল – কারো জন্য জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। শীত যতই তীব্র হোক না কেন, যদি আপনার হৃদয়ে করুণার শিখা জ্বলতে থাকে, তবে প্রতিটি শীতলতা অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
আসুন আমরা সবাই এই শীতে একত্রিত হয়ে একটি “আরামদায়ক শীত” তৈরি করি – যেখানে আমরা অভাবী সকলের সাথে ঘুমের কম্বল এবং জীবনের মর্যাদা ভাগ করে নেব।