হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিকে আপরা একাদশী বলা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা করলে এবং দরিদ্র, অসহায় মানুষদের দান করলে, উপাসকের সমস্ত দুঃখ–কষ্ট দূর হয়। জীবনের সমস্যাগুলিরও সমাধান হয়।
আপরা একাদশীর দিনে পূজা–পাঠ অত্যন্ত ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। একাদশীর দিনে এই জগতের পালনকর্তা ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর উপাসনা করলে ভক্তদের আশীর্বাদ লাভ হয় এবং ভগবান তাদের বৈকুণ্ঠধামে স্থান দেন।
আপরা একাদশী অপার পুণ্য ও সুখের দাত্রী হিসেবে গণ্য হয়। এই দিনে নির্জলা অর্থাৎ জল ছাড়াও উপবাস রাখলে যাবতীয় মনোবাসনা পূর্ণ হয়। আপরা একাদশীর এই পবিত্র দিনে উপবাস করলে ব্রহ্মহত্যা, পরনিন্দা ও প্রেতযোনির মতো পাপ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর পূজা তুলসী, চন্দন, কপূর ও গঙ্গাজল দিয়ে করা উচিত।
২০২৫ সালে আপরা একাদশী ২৩ মে পালিত হবে। একাদশী তিথি শুরু হবে ২২ মে রাত ১:১২ মিনিটে এবং তা শেষ হবে ২৩ মে রাত ১০:২৯ মিনিটে। সনাতন ধর্মে সূর্যোদয়ের সময়ের তিথিকেই মান্যতা দেওয়া হয়, তাই উদয়তিথি অনুসারে একাদশী ২৩ মে হবে।
উপবাস ভঙ্গ বা পারণ করার সময়: ২৪ মে সকাল ৫:২৬ থেকে ৮:১১ পর্যন্ত।
আপরা একাদশী সনাতন ধর্মে অত্যন্ত পুণ্যময় দিন হিসেবে গণ্য হয়। তাই এই পবিত্র দিনে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনার পাশাপাশি স্নান ও দানের মাধ্যমে পুণ্য লাভ হয়। ব্রাহ্মণ ও দরিদ্র, অসহায়, গরীব মানুষদের খাদ্য, বস্ত্র, অর্থ, ধান্য ও ফল দান করা অতি উত্তম বলে বিবেচিত হয়।
এই শুভ দিনে দান করলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভ হয় এবং জীবনের যাবতীয় দুঃখ–কষ্ট দূর হয়।
শাস্ত্র অনুযায়ী, এক হাতে যে দান করা হয় তা সহস্র হাতে আমাদের কাছে ফিরে আসে। মানুষের উপার্জিত অর্থ, যশ ও ঐশ্বর্য সবকিছু এখানেই রয়ে যায়, কিন্তু দানের মাধ্যমে অর্জিত পুণ্য মৃত্যুর পরেও সঙ্গে থাকে।
গোস্বামী তুলসীদাস রামচরিতমানসে দানের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন—
“তুলসী পাখির জলপান করলেও নদীর জল কমে না,
রঘুবীরের কৃপা থাকলে দান করলে ধন কখনো কমে না।“
অর্থাৎ, যেমন পাখিরা জল পান করলেও নদীর জল কমে না, তেমনি ঈশ্বরের কৃপা থাকলে দান করলেও ধনের হ্রাস হয় না।
আপরা একাদশীতে দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। বলা হয়, এই পবিত্র দিনে অন্ন ও খাদ্য দান সর্বশ্রেষ্ঠ।
এছাড়াও দরিদ্র ও অসহায় শিশুদের খাদ্য খাওয়ানো, বস্ত্র দান করা এবং শিক্ষা–সম্পর্কিত জিনিস দান করাও অত্যন্ত পুণ্যময়।
এই পুণ্য উপলক্ষে নারায়ণ সেবা সংস্থার অন্নদান, বস্ত্রদান ও শিক্ষাদান প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে আপনি পুণ্যের ভাগীদার হতে পারেন।